এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় এবার গড় পাসের হার কিছুটা কমেছে। বিপরীতে জিপিএ ৫ প্রাপ্তির সংখ্যা বেড়েছে ৬৩ দশমিক ৩০ শতাংশ। গতবারের তুলনায় এবার পাসের হার কমেছে শূন্য দশমিক ৯ শতাংশ। আর সর্বোচ্চ সাফল্য বলে বিবেচিত জিপিএ ৫ বেড়েছে ৫৩ হাজার ৩১৬টি। মূলত কয়েকটি কারণে গত বছরে তুলনায় এবার পাসের হার ও জিপিএ ৫ এর বড় ব্যবধান তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে চারটি শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার কম, ইংরেজিতে অকৃতকার্যের হার বেশি, আইসিটি বিষয়ে খারাপ ফল, বন্যার কারণে সিলেট বোর্ডে কঠিন বিষয়ে অটোপাস এবং ফলাফলে সাবজেক্ট ম্যাপিং পদ্ধতি প্রয়োগ করায় এ পার্থক্য তৈরি হয়েছে। যে কারণে সার্বিক পাসের হার কমেছে, বিপরীতে অর্ধলক্ষাধিক শিক্ষার্থী বেশি জিপিএ ৫ পেয়েছে। শুধু তাই নয়, প্রকাশিত ফলাফলে বোর্ডওয়ারী গড় পাসের হারেও উর্ধ্বমুখী ও নিম্নমুখীতার ঘটনা ঘটেছে। দেশের ১১টি শিক্ষা বোর্ডের এইচএসসি ও সমমানের প্রকাশিত ফলাফল বিশ্লেষণ ও শিক্ষা বোর্ডগুলোর সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এমন চিত্র পাওয়া গেছে।
এবার ভিন্ন ব্যবস্থায় এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে। অন্যান্য সময়ে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী আনুষ্ঠানিকভাবে ফল প্রকাশের কার্যক্রম উদ্বোধন করতেন। এরপর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করে ফলাফলের বিস্তারিত তথ্য জানানো হতো। কিন্তু এবার বেলা ১১টায় নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও অনলাইনে একযোগে প্রকাশিত হয়। তবে এদিন সাংবাদিকেরা ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে গেলে বোর্ডের চেয়ারম্যান তপন কুমার সরকার ফলাফলের তথ্য তুলে ধরেন। তপন কুমার সরকার দেশের সবগুলো শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানদের সংগঠন আন্তশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি।
বোর্ড সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, চলতি বছরের এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের একাংশের চাপের মুখে মাঝপথে বাতিল করা হয়েছিল এইচএসসিতে স্থগিত হয়ে পড়া কয়েকটি বিষয়ের পরীক্ষা। এ অবস্থায় ইতিমধ্যে যেসব বিষয়ের পরীক্ষা হয়ে গিয়েছিল, সেগুলোর উত্তরপত্র মূল্যায়ন করা হয়েছে। আর যেসব বিষয়ের পরীক্ষা হয়নি, সেগুলোর ফলাফল তৈরি হয়েছে পরীক্ষার্থীদের এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে বিষয় ম্যাপিং করে। তবে এই প্রক্রিয়া নিয়ে প্রকাশিত ফলাফলে অনেকের ধারণা ছিল, পাসের হার অনেক বেড়ে যাবে। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। উল্টো নয়টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীন এইচএসসি পরীক্ষায় গড় পাসের হার গতবারের চেয়ে কমে গেছে। তবে ফলাফলের সর্বোচ্চ সূচক জিপিএ ৫ পাওয়ার সংখ্যা অনেক বেড়েছে। মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ড মিলিয়ে গড় ফলাফলেও একই ধরনের প্রবণতা দেখা গেছে। অর্থাৎ পাসের হার কমেছে। কিন্তু জিপিএ ৫ বেড়েছে।
পাসের হার ও জিপিএ ৫ এর ব্যবধান তৈরির কারণ হিসেবে আন্তশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি অধ্যাপক তপন কুমার সরকার বলেন, এবার পাসের হার কমে যাওয়া ও জিপিএ ৫ বেড়ে যাওয়ার কারণ হচ্ছে- যে বিষয়গুলোর পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছিল, সেগুলোর ফলাফল এসএসসির গড় পাসের হারে বড় রকমের প্রভাব পড়ে না। এসএসসি পাসের হারটি মূলত নির্ভর করে ইংরেজি এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিষয়ের ওপর। কিন্তু এবার এই দুটি বিষয়ের পরীক্ষা হয়েছিল। ফলে গড় পাসের হারটি স্বাভাবিক সময়ের মতো হয়েছে। তবে জিপিএ ৫ বেড়ে যাওয়ার পেছনে অন্যতম প্রভাব হিসেবে বিষয় ম্যাপিং কাজ করেছে বলে মনে করেন তপন কুমার সরকার। তিনি বলেন, এসএসসিতে বিজ্ঞান বিভাগে পড়ে যে শিক্ষার্থী জিপিএ ৫ পেয়েছিলেন, তিনি হয়তো এইচএসসিতে মানবিকে পড়েছেন। ফলে এসএসসির বিজ্ঞানের বিষয়গুলোর নম্বর এইচএসসিতে এসে মানবিকের বিষয়গুলোর বিপরীতে যোগ হয়েছে। এভাবে বিভাগ পরিবর্তনের কারণে জিপিএ ৫ বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ।
এবার ১১টি শিক্ষা বোর্ডের অধীন এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন ১৩ লাখ ৩১ হাজার ৫৮জন পরীক্ষার্থী। এর মধ্যে পাস করেছেন ১০ লাখ ৩৫ হাজার ৩০৯ জন। গড় পাসের হার ৭৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ। গতবার পাসের হার ছিল ৭৮ দশমিক ৬৮ শতাংশ। এবার ১১টি বোর্ডে জিপিএ ৫ পেয়েছে ১ লাখ ৪৫ হাজার ৯১১জন, যা গতবার ছিল ৯২ হাজার ৫৯৫জন। সে হিসেবে এবার জিপিএ ৫ বেড়েছে ৫৩ হাজার ৩১৬জন। আর ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীন এবার এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন ১১ লাখ ৩১ হাজার ১১৮ জন পরীক্ষার্থী। এর মধ্যে পাস করেছেন ৮ লাখ ৫৪ হাজার ৬৪৪ জন। গড় পাসের হার ৭৫ দশমিক ৫৬। গতবার গড় পাসের হার ছিল ৭৬ দশমিক ৯। এবার ৯টি শিক্ষা বোর্ডের এইচএসসিতে জিপিএ–৫ পেয়েছেন ১ লাখ ৩১ হাজার ৩৭৬ জন, যা গতবার ছিল ৭৮ হাজার ৫২১ জন। এ ছাড়া মাদ্রাসা বোর্ডে আলিম পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন ৮৫ হাজার ৫৫৮জন। এর মধ্যে পাস করেছে ৭৯ হাজার ৯০৯জন। পাসের হার ৯৩ দশমিক ৪০ শতাংশ। গতবার ছিল ৯০ দশমিক ৭৫ শতাংশ। আর জিপিএ ৫ পেয়েছে ৯ হাজার ৬১৩জন। অন্যদিকে কারিগরি বোর্ডে ১ লাখ ১৪ হাজার ৩৮২জন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করেছে ১ লাখ ৭৫৬জন। পাসের হার ৮৮ দশমিক ০৯ শতাংশ। জিপিএ ৫ পেয়েছে ৪ হাজার ৯২২জন।
শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা জানান, এইচএসসিতে বিভাগওয়ারী একজন শিক্ষার্থীকে মোট সাতটি বিষয়ের পরীক্ষায় বসতে হয়। তবে এবার শুধুমাত্র চারটি বিষয়ের পরীক্ষা হয়েছে। বাকি তিনটি বিষয়ের পরীক্ষা সবারই বাতিল হয়েছে। অনুষ্ঠিত পরীক্ষাগুলোর মধ্যে ইংরেজি ও আইসিটির মতো আবশ্যিক বিষয়গুলোতে শিক্ষার্থীদের ফেলের হার বেশি। যে বোর্ডগুলোতে এ দুটি বিষয়ে বেশি ফেল করেছে, সেখানে পাসের হারও কমে গেছে। এতে নিম্নমুখী হয়েছে সার্বিক গড় পাসের হারে। আর বন্যার কারণে সিলেট বোর্ডে ইংরেজির পরীক্ষা বাতিল হয়েছে। এ বিষয়ের ফলাফল তৈরি করা হয়েছে অটোপাস দিয়ে। যে কারণে এ বোর্ডে ইংরেজিতে শতভাগ শিক্ষার্থী পাস করেছে। এজন্য ৯টি সাধারণ বোর্ডে এ বোর্ডটি পাসের হারে রেকর্ডও করেছে। যা সার্বিক জিপিএ ৫ প্রাপ্তির হার বাড়ানোর নিয়ামক হিসেবে কাজ করছে।
প্রকাশিত ফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, যশোর, কুমিল্লা, চট্রগ্রাম ও ময়মনসিংহ বোর্ডে ইংরেজি বিষয়ে ফল খারাপ হয়েছে। এ চার বোর্ডে গড়ে প্রায় ৩০ শতাংশের মতো শিক্ষার্থী ফেল করেছে। যে কারণে সার্বিক পাসের হার খারাপ হয়েছে। বিশ্লেষণে দেখা যায়, যশোর বোর্ডে শুধু ইংরেজি বিষয়ে ফেল করেছেন ৩১ দশমিক ২৪ শতাংশ পরীক্ষার্থী। ইংরেজি পরীক্ষায় প্রতি ১০০ জনে মাত্র ৬৮ জন পাস করতে পেরেছেন। তবে বাকি ৫টি বিষয়ে ভালো ফল করেছেন যশোর বোর্ডের পরীক্ষার্থীরা। যশোর বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মর্জিনা আক্তার জানিয়েছেন, ইংরেজিতে ফেল করার কারণে মূলত পাসের হারে প্রভাব ফেলছে। ইংরেজিতে বেশি ফেলের কারণ অনুসন্ধান করে পরবর্তীতে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন তিনি। চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডেও ইংরেজিতে ফল বিপর্যয় হয়েছে। এ বোর্ডে ইংরেজি বিষয়ে পাসের হার মাত্র ৬৯ শতাংশ। প্রতি ১০০ জনে ইংরেজিতে ফেল করেছেন ৩১ শতাংশ শিক্ষার্থী। যার প্রভাব পড়েছে বোর্ডের গড় পাসের হারেও। এ বোর্ডে পাস করেছেন ৭০ দশমিক ৩২ শতাংশ শিক্ষার্থী। এ বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেজাউল করিম জানিয়েছেন, এ বোর্ডে অনুষ্ঠিত পরীক্ষাগুলোর মধ্যে শুধু ইংরেজিতে খারাপ করেছে। যে কারণে পাসের হারে আমরা পিছিয়ে গেছি।
কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডেও ইংরেজিতে বেশি ফেল করেছেন শিক্ষার্থীরা। বোর্ডটিতে ইংরেজিতে ফেলের হার ২০ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ। বাকি ৫ বিষয়ে তুলনামূলক ভালো ফল করলেও ইংরেজির কারণে গড় পাসের হারে পিছিয়ে গেছে কুমিল্লা। অনুষ্ঠিত বাকি বিষয়গুলোর মধ্যে কুমিল্লায় বাংলায় পাসের হার ৯২ দশমিক ৮৩ শতাংশ, আইসিটিতে ৮৮ দশমিক ৬৪, পদার্থবিদ্যায় ৯৬ দশমিক ২৮, যুক্তিবিদ্যায় ৮৭ দশমিক ৮৩ ও হিসাববিজ্ঞানে ৮৭ দশমিক ৮১ শতাংশ। শুধু তাই নয়, ময়মনসিংহ বোর্ডেও ইংরেজিতে খারাপ ফল হয়েছে। অর্থ্যাৎ এ বোর্ডেও প্রায় ২৩ শতাংশ শিক্ষার্থী ইংরেজিতে ফেল করেছে। যা সার্বিক পাসের হারে প্রভাব ফেলেছে।
ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এইচএসসিতে এবার পাসের হারে সবার নিচে ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ড। প্রায় একই রকম পাসের হার যশোর বোর্ডেও। কাছাকাছি অবস্থানে চট্টগ্রাম বোর্ডও। অন্য বোর্ডগুলোর তুলনায় এ তিনটি শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার তুলনামূলক অনেক কম, যার প্রভাব পড়েছে সার্বিক গড় পাসের হারে। মূলত ইংরেজিতে বেশি ফেল করায় এ দুটি বোর্ডে ফল বিপর্যয় হয়েছে বলে জানিয়েছেন বোর্ড সংশ্লিষ্টরা। বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার ৬৩ দশমিক ২২ শতাংশ। আর যশোর বোর্ডে ৬৪ দশমিক ২৯ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছেন। দুই বোর্ডে যথাক্রমে ৩৬ দশমিক ৭৮ এবং ৩৫ দশমিক ৭১ শতাংশ শিক্ষার্থীই ফেল করেছেন। তাছাড়া চট্টগ্রাম ও কুমিল্লায়ও তুলনামূলক ফল খারাপ। বোর্ড দুটিতে যথাক্রমে পাসের হার ৭০ দশমিক ৩২ শতাংশ ও ৭১ দশমিক ১৫ শতাংশ। এ খারাপ ফলের নেপথ্যে ইংরেজি, আইসিটি বিষয় দায়ী।
ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, সাধারণ ৯টি শিক্ষা বোর্ডে ৬টি বিষয়ের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেগুলো হলো- বাংলা, ইংরেজি, আইসিটি, পদার্থবিজ্ঞান, যুক্তিবিদ্যা ও হিসাববিজ্ঞান। অনুষ্ঠিত পরীক্ষাগুলোর মধ্যে ময়মনসিংহ বোর্ডে শুধু ইংরেজিতে পাসের হার ৭৭ দশমিক ১১ শতাংশ। অর্থাৎ, প্রতি ১০০ জনে প্রায় ২৩ জনই ইংরেজিতে ফেল করেছেন। এর বাইরে বোর্ডটিতে আইসিটিতেও ফেলের হার বেশি। আইসিটি বিষয়ে পাস করেছেন ৭৩ দশমিক ৭১ শতাংশ। আর ফেল করেছেন ২৬ দশমিক ২৯ শতাংশ পরীক্ষার্থী। এছাড়া হিসাববিজ্ঞানেও পাসের হার কম এ বোর্ডে। মাত্র ৭১ দশমিক ৩৯ শতাংশ শিক্ষার্থী হিসাববিজ্ঞানে পাস করতে পেরেছেন। বাকি ২৮ দশমিক ৬১ শতাংশ শিক্ষার্থী ফেল করেছেন। এ বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. আবু তাহের বলেন, মূলত তিনটি বিষয়ে শিক্ষার্থীরা খারাপ করেছে। এর মধ্যে ইংরেজি, আইসিটি ও হিসাববিজ্ঞানের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো। এ বিষয়টি আমরা আমলে নিয়ে পরবর্তীতে কারণ খতিয়ে ব্যবস্থা নেব।
এবার পাসের হারে এগিয়ে আছে সিলেট বোর্ড। এ বোর্ডে পাসের হার ৮৫ দশমিক ৩৯ শতাংশ। অপর দিকে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার ৭৯ দশমিক ২১, রাজশাহী ৮১ দশমিক ২৪, কুমিল্লা ৭১ দশমিক ১৫, যশোর ৬৪ দশমিক ২৯, চট্টগ্রাম ৭০ দশমিক ৩২, বরিশাল ৮১ দশমিক ৮৫, দিনাজপুর ৭৭ দশমিক ৫৬ শতাংশ। এই পরিসংখ্যান অনুযায়ী ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের মধ্যে সিলেট শিক্ষা বোর্ড পাসের হারে সর্বোচ্চ বেশি ৮৫ দশমিক ৩৯ শতাংশ। আর সব চেয়ে কম ময়মনসিংহ ৬৩ দশমিক ২২ শতাংশ। অন্যদিকে ১১টি বোর্ডে পাসের হারে এগিয়ে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড। এ বোর্ডে পাসের হার ৯৩ দশমিক ৪০ শতাংশ এবং দ্বিতীয় সর্বোচ্চ হিসেবে কারিগরি বোর্ড। এ বোর্ডে পাসের হার ৮৮ দশমিক ০৯ শতাংশ।
ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এবার অটোপাসে সিলেট বোর্ডে চমকপ্রদ ফলাফল এসেছে। যার নিয়ামক হিসেবে কাজ করছে সৃষ্ট বন্যা পরিস্থিতি। বন্যার কারণে এ বোর্ডে পরীক্ষা শুরু হয় দেরিতে। বাংলা ও ইংরেজি পরীক্ষা স্থগিত হয়ে যায়। ৯ জুলাই থেকে আইসিটির মাধ্যমে সিলেট বোর্ডে পরীক্ষা শুরু হয়। পরে পরীক্ষা বাতিল হওয়ায় সিলেটের পরীক্ষার্থীদের বাংলা ও ইংরেজি বিষয়ে পরীক্ষায় বসতে হয়নি। বিগত এসএসসি পরীক্ষায় তারা বাংলা ও ইংরেজিতে যে নম্বর পেয়েছিল, সেটাই এইচএসসিতে ম্যাপিং করে ফলাফলে যুক্ত করা হয়েছে। এ দুটি বিষয়ে সিলেটে পাসের হার শতভাগ। অর্থ্যাৎ এটি অন্যতম নিয়মক। আর অনুষ্ঠিত বাকি ৪টি বিষয়ে তুলনামূলক ভালো ফল করায় বোর্ডটি এবার সবার শীর্ষে রয়েছে। এ বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. জাকির আহমদ জানিয়েছেন, ইংরেজি ও বাংলা পরীক্ষা না হওয়ায় বেশ সুবিধা পেয়েছে সিলেটের শিক্ষার্থীরা। ইংরেজিতে অনেক সময় ছাত্র-ছাত্রীরা খারাপ করে। সেদিক দিয়ে ওই পরীক্ষাটা না হওয়ায় পাসের হার হয়তো কিছুটা বেশি।
যেভাবে হয়েছে বিষয় ম্যাপিং ঃ সংকটকালীন সময়ে সাধারণ বিষয় ম্যাপিং করা হয়। এর আগে করোনাকালে পরীক্ষা নিতে না পারায় কিংবা কম বিষয়ে পরীক্ষা নিতে গিয়ে এই বিষয় ম্যাপিং করে ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে। এ জন্য কোনো পরীক্ষার কোন বিষয়ের নম্বর যুক্ত হবে, সে বিষয়ে একটি নীতিমালাও আছে। এবার যেসব বিষয়ের পরীক্ষা হয়নি, সেগুলোর ফলাফল প্রকাশ করা হয় এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে বিষয় ম্যাপিং করে। এ প্রক্রিয়ায় একজন পরীক্ষার্থী এসএসসিতে একটি বিষয়ে যত নম্বর পেয়েছিলেন, এইচএসসিতে সেই বিষয় থাকলে তাতে এসএসসিতে প্রাপ্ত পুরো নম্বর বিবেচনায় নেওয়া হবে। আর এসএসসি, এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় বিষয়ে ভিন্নতা থাকলে বিষয় ম্যাপিংয়ের নীতিমালা অনুযায়ী নম্বর বিবেচনা করে ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে। যেমন এসএসসিতে যে পরীক্ষার্থী বিজ্ঞানে পড়েছিলেন, এইচএসসিতে হয়তো তিনি ব্যবসায় শিক্ষা বা মানবিক শাখায় পড়েছেন। সে ক্ষেত্রে এসএসসিতে বিজ্ঞানের বিষয়গুলোর প্রাপ্ত নম্বর পরীক্ষার্থীর এইচএসসির ব্যবসায় শিক্ষা বা মানবিকের নৈর্বাচনিক বিষয়ের নম্বর হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে।
এবার এইচএসসি বা সমমানের পরীক্ষা শুরু হয়েছিল গত ৩০ জুন। মোট অংশগ্রহণকারী পরীক্ষার্থী ছিলেন ১৩ লাখ ৩১ হাজার ৫৮ জন। সাতটি পরীক্ষা হওয়ার পর সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। এ পরিস্থিতিতে কয়েক দফায় পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। তখন পর্যন্ত ছয়টি বিষয়ের পরীক্ষা বাকি ছিল। এ ছাড়া ব্যবহারিক পরীক্ষাও বাকি। ছাত্রদের দাবির মুখে পরে বাকি পরীক্ষগুলো হয়নি
বাংলা স্কুপ/এএইচ/এসকে
এইচএসসির ফল প্রকাশ : পাসের হার ৭৭.৭৮, জিপিএ ১ লাখ ৪৫ হাজার ৯১১ জন